অনিরুদ্ধ মজুমদার: রাজ্য রাজনীতিতে চরম উত্তেজনা। শুভেন্দু অধিকারী কী করবেন তা নিয়ে জল্পনার পারদ প্রতিদিনই চড়ছে। এর মাঝেই শুভেন্দু কার্যত হুমকির সুরে জানিয়েছেন ১৯ তারিখ তিনি প্রকাশ্যে কিছু বলবেন। কী ঘোষণা করবেন তা নিয়েও তৃণমূল-বিজেপি দুই শিবিরেই চাপানোতর বাড়ছে বৈ কমছে না। কিন্তু আচমকা শুভেন্দুর এমন হালচাল বদলে যাওয়ার, কারণ কী? একি, নিছক কাকতালীয় নাকি এর পিছনে রয়েছে কোনও গূঢ় রহস্য? তবে শুভেন্দু একা নন, তৃণমূলের প্রায় একডজন বিধায়ক (বেশিও হতে পারে) আচমকাই দলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। না, দল নয়, আসলে তাঁরা ক্ষুব্ধ প্রশান্ত কিশোরের উপর। দিল্লি, মহারাষ্ট্র, বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাটে কখনও শাসকদলের হয়ে কখনও আবার বিরোধী দলের হয়ে ভোট স্ট্র্যাটেজি বা রণকৌশল ঠিক করেছেন প্রশান্ত কিশোর। তিনি নিজেকে ভোট কৌশলি হিসেবে পরিচয় দিতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। ভোট কীভাবে পরিচালিত হবে, রাজনৈতিক নেতারা কীভাবে হাঁটবেন, হাত নাড়েবন তা সব কিছুই তিনিই ঠিক করবেন। বিনিময়ে নেবেন মোটা টাকা। এক কথায় রাজনৈতিক নেতাদের বা যে দলের হয়ে তিনি কাজ করবেন তাদের মেন্টর হবেন পিকে। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু গোল বাঁধল পিকে'র ফিকে হয়ে যাওয়া ইমেজ। পিকে যে সব নির্বাচনে সাফল্য পেয়েছেন তা নয়, বরং তাঁর ঝুলিতে ব্যর্থতার তালিকা দীর্ঘ। এমনকি যে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন সেই জেডিইউ ফের বিহারের ক্ষমতায় এসেছে। জেডিউ থেকে পিকে সরে যাওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বটেই বিজেপি বিরোধী অনেক নেতাই উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন। তাদের মনোভাব ছিল অনেকটা এরকম যে, এবার নিতিশ কুমার কে কে বাঁচায় দেখি। কিন্তু আদতে দেখা গেল পিকের ইমেজ ধুলিস্যাৎ করে জনতা জনার্দন ভরসা রাখলেন সেই নীতীশ কুমারের ওপরই। তার মানে স্পষ্ট পিকে বিধাতা নন। তাহলে প্রশান্ত কিশোরকে এত প্রাধান্য দিচ্ছে কেন তৃণমূল সুপ্রিমো? যেখানে পিকের জন্য একের পর এক বিধায়ক দল ছাড়ছেন সেখানে অযথা জেদ, একগুয়ি করে লাভটা কার হচ্ছে? বরং ক্রমেই ক্ষতির দিকে ঝুঁকেছে তৃণমূল।কয়েক মাস বাদেই রাজ্যে বিধানসভার ভোট, তার আগে বর্তমান বিধায়কদের চটিয়ে, তাঁদের হাতছাড়া করে দলেরই ক্ষতি করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ বাংলার রাজনীতি নিয়ে সম্পুর্ণ অজ্ঞ প্রশান্ত কিশোর। ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাংলায় রাজনীতি চলে না। তাঁর মনোভাবে বাংলার ভোটও সম্ভব নয়। তা সম্ভবত জানেন তৃণমূল সুপ্রিমো, কিন্তু তারপরও যেভাবে পিকের উপরই আস্থা রেখেছেন তিনি তাতে হতবাক রাজনৈতিক মহল। অনেকেই বলছেন, আদতে এখানে তৃণমূলকে নিয়ে না ডোবে পিকের জাহাজ!
0 Comments