রাজনীতিতে ঘটে চলে বহু ঘটনা, উত্থান-পতন। গদি বাঁচানো ও গদি কেড়ে নেওয়া এটা স্বাভাবিক এবং আদিম বিষয়। ইতিহাসের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখলে এমন উদাহরণ একটা নয়, বরং ভূরি ভূরি মেলে। খুনাখুনি খুবই আম বিষয় । বিপুল ভূখণ্ড নিয়ে ভারত। সেখানে যত দল তত রঙ আর তার থেকেও বেশী প্রতিশ্রুতি ।
স্বাধীন ভারতের পরবর্তী সময়ে বঙ্গ রাজনীতি নানা পরিবর্তন ও পরিবর্ধন দেখেছে । মুখ্যমন্ত্রীত্বের আসন লাভের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে জাতীয় কংগ্রেস বনাম লাল শিবির। রাইটার্স বিল্ডিং-এ কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী এবং দিল্লির সাত নম্বর রেসকোর্সে ইন্দিরা গান্ধীর যুগ্ম উদ্যোগে প্রেসের অধিকার খর্ব এবং ইমারজেন্সি ঘোষণা করা। এ সব মানুষ ভোলে নি। নকশাল আন্দোলন দমনের জন্য পুলিশের নির্মমতায় প্রাণ গেছে বহু সাধারণ যুবকের। তাদের রক্তের তাজা গন্ধ অলিগলিতে আজও অনেক কথা বলে যায়। ১৯৭৫ সালের ঠিক ২টি বছর পর বাংলা প্রথমবার বামপন্থী নেতাকে বাংলার সিংহাসনে বসায়। পরিবর্তন হয় পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি।
আগেই লিখেছিলাম রাজনীতির নির্দিষ্ট একটা ছন্দ রয়েছে। বামফ্রন্ট সরকার বাংলার রাজনীতিতে বসার পর যে সেই হিংসা, হানাহানি বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো তা কিন্তু নয়। হয়েছে। দিল্লী থেকে বিভিন্ন বহরের রাজ নেতা নেত্রী গান্ধী মূর্তির পাদদেশ কিংবা শহিদ মিনারের তলায় ধর্ণা থেকে সভা অথবা হিমালয়ের কোল থেকে বঙ্গোপসাগরের কূলে বারবার সভা করে বামফ্রন্ট সরকারের ব্যর্থতার কথা গলা কাঁপিয়ে বলে গেছেন। কিন্তু প্রতিপকক্ষ বা বিরোধী শিবিরকে বাহুবলে আক্রমণ করেন নি কেউই। হ্যাঁ, বিরোধিতার এবং বিরোধীর জন্য ঝাঁঝালো বাক্যবাণ মনে রেখেছি আমরা অর্থাৎ মিডিয়ারা। সেই ঝাঁঝ গায়ের চামড়ায় দাগ কেটে গেলেও রাজনীতির মাধুর্যকে পঙ্কিল করে নি।
পুনরায় মানুষ বেছে নেয় নতুন মুখ। ততদিনে ক্ষমতার নেশায় অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে সর্বহারাদের চেহারা। ৩৪বছর পর মানুষ কার্যত ছুঁড়ে ফেলে দেয় বামফ্রন্টকে। আসীন হন মমতা বন্দোপাধ্যায়। শুরুটা ভালো। মানুষ একটু বাঁচার স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন গড়ে এবং যথারীতি ভাঙতেও থাকে। ১০ বছরে বাংলা বেশ কিছু চেঞ্জ হয়েছে। বাহ্যিক চাকচিক্যের আড়ালে বাহুবলী ভাইপো এবং সাঙ্গপাঙ্গরা যেসব কান্ডকারখানা করতে থাকে তাতে মমতা ধীরে ধীরে কালিমালিপ্ত হন। নারদা-সারদায় তুমুল ভাবে তৃণমূল জড়িয়ে পরে। এসব ইতিহাস প্রাপ্তবয়স্ক ও প্রাপ্তমনষ্ক প্রায় সকলেই জানেন।
যে কথা বলেছিলাম ক্ষমতা লাভ আর তা ছিনিয়ে নেওয়া এটা রাজনীতির অঙ্গ। কিন্তু রাজনীতির অপ্রয়োজনীয় এবং নেতিবাচক দিক হলো দৈহিক আক্রমণ। সেটাও হলো। গতকাল বিজেপির সর্বভারতীয় নেতার উপর পাথর বৃষ্টি। বিষয়টি গভীরে ভাবা দরকার।
১৯৭৫ সাল থেকে ২০২০ সালের শেষ লগ্ন। দীর্ঘ ৪২ বছরের বঙ্গ রাজনীতিতে এমনটা কিন্তু সাধারণ ভোটাররা বা নাগরিক কিংবা মিডিয়া দেখেই নি। মনেও করা যায় না জেড সিকুরিটি প্রাপ্ত কোন দলের সর্বভারতীয় সম্পাদকের উপর এমন আক্রমণ!
এখানে দুটি দিক বা বিশ্লেষণ উঠে আসে । এক, গেরুয়া শিবির কি নিজেই নিজের লোকের উপর পাথর বৃষ্টি করিয়ে পশ্চিমবঙ্গের হিংসা ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা প্রমাণ করার চেষ্টা করলো? উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য রাষ্ট্রপতি শাসন!
দুই, তৃণমূল কি এই কান্ডের দায়ভার নিয়ে প্রমাণিত করতে বসলো যে, বাংলাকে গুজরাট হতে দেবে না ?
তবে এই দুই বিশ্লেষণের মাঝে একটা বাক্য লিখতে চাই। গত লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হেলিকপ্টারকে কিন্তু মাটি ছুঁতে বেশ খানিকটা বেগ পেতে হয়েছিল।
রাজনীতির মৃত্যু তখনই হয় যখন সেখানে বেনজলের সাথে আত্ম অহংকার কঠিন পাথরের মতো জমাট বাঁধে। এখন সময়ের অপেক্ষা । আর কয়েকটি মাসের পরেই মানুষ ১০ বছরের রিপোর্ট কার্ডে সঠিক নম্বর দেবে। ততদিনে হাওয়া কোন দিকে বয় সেটাই দেখার॥
0 Comments