অনিরুদ্ধ মজুমদার: ২০০৭ থেকে শুরু। জমি অধিগ্রহণ আন্দোলনকে হাতিয়ার করেই ক্ষমতার মসনদে পৌঁছানো। মাত্র পাঁচ বছরে রাজ্য রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বদল এসেছিল বিস্তর। সিঙ্গুর, নন্দিগ্রাম, নেতাই একের পর এক ঘটনা দ্রুত পরিবর্তন করেছিল প্লট। কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন অবশ্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কেন্দ্রকে আবর্তন করে ঘিরে থাকা মুখ গুলোও যে যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে, ক্ষমতার অলিন্দে থাকতে থাকতে তা ভুলতে বসেছিলেন মমতা। তাই দশ বছরের মাথায় তাঁর দলে বেনজির সংঘাত। মিহির গোস্বামী, বেচারাম মান্না, শীলভদ্র দত্ত, শুভেন্দু অধিকারীরা আজ হঠাৎ বেঁকে বসেছেন কেন? বা মুকুল রায়, অর্জুন সিংয়ের মত নেতারাই বা দল ছাড়লেন কেন? এ নিছক কাকতালীয় কী? রাজনৈতিক রসায়ন কিন্তু অন্যকথা বলছে। দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ, অভিযোগের সলতে পাকানোর কাজ শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর পরই দলের মধ্যেই চাপা গুঞ্জন চলছিল। দল ভাঙানোর খেলাও সকলে ভালো চোখে নেন নি। কারোরই বুঝতে অসুবিধা ছিল না, দলের রাশ ক্রমেই মমতার হাত থেকে আলগা হচ্ছে। জনপ্রিয়তা না কমলেও তাঁর প্রতি মানুষের আস্থার জায়গাটা যে অটুট তা বলা সম্ভব নয়। মমতা কে ছাপিয়ে উঠতে চাইছেন অভিষেক। আর তাতেই আপত্তি ছিল বা এখনও আছে অনেকেরই। মুকুল, অর্জুন, নিশীথ বা সৌমিত্রের দল ছাড়ার কারণ অভিষেক। শুভেন্দুর গোঁসা হওয়ার পিছনেও সেই অভিষেক। এমনকি তৃণমূলের তৃণমূল স্তরের গোষ্ঠী কোন্দলের মূলেও সেই অভিষেক। তার উপর নতুন করে টিম সাজানো। কোনও টা পিকের টিম, কোনও টা কুনাল ঘোষের টিম, কোনও টা সুজিত বসুর টিম। সব টিমের মাঝে যারা প্রকৃত তৃণমূল কর্মী হিসেবে কাজ করে এলেন এত গুলো বছর, তাঁদের মর্যাদা কোথায়? যে লোক গুলো জেল ফেরত আসামি (মদন মিত্র, কুনাল ঘোষ) তাদের কেন ফের সামনে আনা! সুতরাং অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে। শিয়রে শমনের মতো দাঁড়িয়ে কড়া নাড়ছে ভোট। মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন ঠিকই যে তিনিই রাজ্যের সব কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক বা তিনিই প্রার্থী। কিন্তু এবার চিঁড়ে এত সহজে ভিজবে বলে মনে করছে না ওয়াকিবহল মহল। বরং ভোট বাক্সে বুমেরাং হয়ে যেতে পারে।
0 Comments